মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট



বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট



বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট



বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট






অহনলিপি-বাংলা১৪ ডিফল্ট ইন্টারনেট সেটিং
(AhanLipi-Bangla14 Default Internet setting)

(Default font setting ডিফল্ট ফন্ট সেটিং)

on internet(Mozilla Firefox)
(top left) Tools  
              Options > contents
              Fonts & Colors
              Default font:=AhanLipi-Bangla14
                        Advanced...
                                    Fonts for: =Bengali
                                    Proportional = Sans Serif,   Size=20
                                    Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Sans Serif=AhanLipi-Bangla14
                                    Monospace=AhanLipi-Bangla14,  Size=20
                                    -->OK
            Languages
            Choose your preferred Language for displaying pages
            Choose
            Languages in order of preference
            Bengali[bn]
            -->OK
  --> OK

          এবারে ইন্টারনেট খুললে ‘অহনলিপি-বাংলা১৪’ ফন্টে সকলকিছু দেখা যাবে৤ নেটে একই ফন্টে সব কিছু লেখাও যাবে৤










লেখাটি অহনলিপি-বাংলা১৪ (AhanLipi-Bangla14)
     ফন্টে পড়তে হবে, নচেৎ লেখাটির বক্তব্য স্পষ্ট হবে না৤ ফন্ট প্যাকেজ ডাউনলোড
লিংক: 
https://sites.google.com/site/ahanlipi/font-download/AhanLipi-Bangla14.zip


বাংলা দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট
মনোজকুমার দ. গিরিশ

       বাংলা কম্পিউটারে যে-ফন্ট(হরফসমূহ) ব্যবহার করা হয়, তা এখন অবধি প্রথম প্রজন্মের ফন্ট৤ সেটা যদি আধুনিক ইউনিকোড ফন্টও হয়, তবুও তা সেই প্রথম প্রজন্মেরই৤ আসলে তা মূলত বিদ্যাসাগরী ফন্ট৤ হাতের ছাপাখানায়ও এইরকম ফন্ট ব্যবহার করা হয়৤ বিদ্যাসাগরী ফন্ট থেকে বাইরের চেহারায় তার মৌলিক তফাত কমই৤
       কম্পিউটারে যে বাংলা ফন্ট ব্যবহার করা হয়, তা এখনও প্রথম প্রজন্মের ফন্ট৤ কম্পিউটারে যে বাংলা লেখা যাবে, আগে তো ভাবাই যেত না৤ গত শতকের আটের দশকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সমর ভট্টাচার্য কম্পিউটারে বাংলা লেখার জন্য প্রথম বাংলা ফন্ট তৈরি করেন৤ সে ফন্ট ছিল নন-ইউনিকোড ফন্ট৤ ইউনিকোডের ধারণাটিই আসে অনেক পরে৤ আগেকার নন-ইউনিকোড ফন্ট এমন এক পুরানো ব্যবস্থা যে, সেই ঠিক একই নামের একই ফন্ট অন্য কারও কম্পিউটারে থাকলে তবেই দুজনের মধ্যে টেক্সট বিনিময় করা যেত৤ নয়তো তা কিছু ছোটো ছোটো বাক্স হয়ে দেখা দিত৤ ধরি আমার কাছে আছে ‘কলম’ নামের একটি ফন্ট অন্য এক জনের কাছে আছে ‘লেখনী’ নামের অন্য একটি ফন্ট৤ ‘লেখনী’ ফন্টে টাইপ করা কোনও লেখা আমার কম্পিউটারে কপি পেস্ট করলে তা আমি পড়তে পারব না৤ আবার আমার ‘কলম’ ফন্টে টাইপ করা লেখা কপি পেস্ট করলে অন্য কম্পিউটারে পড়া যাবে না৤ সমস্যাটি মূলত ফন্টের কোড নিয়ে, ফন্ট তৈরি করতে যে-কোড ব্যবহার করা হয়, উভয়ের ফন্টের মধ্যে সে-কোডের মিল না থাকার জন্যই এমন বাক্স-বিভ্রাট৤ এটা কম্পিউটার ব্যবস্থার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার৤ টেক্সট লেখকের তা নিয়ে কিছু করার নেই৤
       এভাবেই চলছিল৤ তারপরে আন্তর্জাতিক ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম পৃথিবীর সকল ভাষার, সকল হরফের জন্য, একটি করে কোড নির্ধারণ করে দেয়, ফলে একজনের টেক্সট অন্য জনের কম্পিউটারে পড়া গেল৤ ভিন্ন নামের ফন্ট হলেও অসুবিধে নেই, সেটি ইউনিকোড ফন্ট হলেই হল৤ কারণ তখন উভয়ের কম্পিউটারে ফন্ট কোড হবে একই৤ তখন ধরি আমার আছে ‘বিনয়’ ফন্ট অন্য জনের আছে ‘সহজ’ ফন্ট৤ ফন্টের এই ‘নামের’ পার্থক্য তখন কোনও অসুবিধা তৈরি করবে না৤ দুটি ফন্টের নাম আলাদা, চেহারাও বেশ আলাদা কিন্তু আভ্যন্তরীণ গঠন একই৤ কপি করলে ফন্টের বাইরের চেহারা হয়তো পালটে যাবে, কিন্তু কোড একই থাকার জন্য হরফের কোনও ভেদ হবে না৤ ‘ক’ লেখা থাকলে অন্যের কম্পিউটারেও তা “ক” দেখাবে, বাক্স হয়ে দেখা দেবে না৤ তবে ‘ক’-এর আঁকড়ির আঁচড়টা হয়তো একটু ভিন্ন, যেহেতু ফন্ট দুটিতে দুজনে নিজেদের মতো করে হরফের ছবি এঁকেছেন৤ তাতে চেহারার ভেদ হলেও মূল হরফের ভেদ হবে না৤ এভাবে নন-ইউনিকোড ফন্টজনিত সমস্যা মিটল৤
       বাংলা ছাপাখানায় যে গঠনের টাইপে বইপত্র ছাপা হয়, কম্পিউটারেও ঠিক সেই একই ধরনের ফন্ট-টাইপের গঠন৤ নন-ইউনিকোড, এবং ইউনিকোড ফন্টের গঠনও ঠিক সেই একই রকম রয়ে গেছে৤ বাইরের চেহারা দেখে বোঝা যাবে না, কোন্‌টা ইউনিকোড ফন্ট, আর কোন্‌টা নন-ইউনিকোড ফন্ট৤ সবই একরকম দেখতে, শুধু ভিতরের কারিগরি কৌশল সম্পূর্ণ ভিন্ন৤
       বাংলায়ও একাধিক নতুন আকৃতির ইউনিকোড ফন্ট তৈরি হয়েছে, কিন্তু তা রয়ে গেছে সেই প্রথম প্রজন্মের ফন্টই৤ অর্থাৎ সেই দলা পাকানো যুক্তবর্ণ বা মণ্ডহরফ৤ মনে হবে যেন দুটো বা তিনটে হরফ থেকে তাদের হাত-পা কেটে নিয়ে, বা সরাসরি দলা পাকিয়ে বানানো৤ রুটি করার আটা যেমন দলা পাকানো হয়, বাংলা যুক্তবর্ণগুলোও ঠিক তেমনি করে দলা পাকানো৤ ধরি ভ+ল=
কিংবা ষ+ণ=ষ৏  ৤ এসব বোঝা খুবই কঠিন৤ পণ্ডিত লোকেরাও মনে করেন ষ৏  হল ষ+ঞ কোন্‌ হরফের সঙ্গে কোন্‌ হরফের দলা পাকানো হয়েছে তা বোঝা দুঃসাধ্য (ষ+ণ=ষ্ণ =ষ৏ ৤ এর একটা আনুমানিক বিবর্তন এমন হতে পারে--
সে যুগে ণ
লেখা হত ল-এর মতো করে, শুধু তার মাত্রাটা বাদ)৤ এতে লাভ নেই, কিন্তু লোকসান আছে অনেক৤ এসব শিশুদের দুঃখের কারণ৤ পিঠে বেত পড়াও আশ্চর্য নয়, কিন্তু তার আসল দায় তার নয়৤ আমরা নিজেদের দায় শিশুদের ঘাড়ে অনায়াসে চাপিয়ে দিচ্ছি৤
       সোজা করে যে লিখব তার ব্যবস্থা করিনি৤ চিন্তাভাবনা করিনি৤ বরং আরও জড়িয়ে পেঁচিয়ে লিখে জায়গা বাঁচাচ্ছি, শ্রম বাঁচাচ্ছি৤ কিন্তু ভাষাটি বাঁচছে না৤ ভাষার মৃত্যু ঘণ্টা আংশিক বাজছে এসবের মাধ্যমে৤ বাংলাভাষা দুর্বল হচ্ছে৤ সেটা না বুঝলে বাংলার পক্ষে বড় মুশকিল৤
       স্কুলে ক্লাস ফাইভ/সিক্সে যারা পড়ে তাদের কারও-কারও নাকি হরফ পরিচয়ই হয়নি৤ এমন খবর স্কুলের শিক্ষক মহাশয় কাগজে চিঠি লিখে জানাচ্ছেন৤ ঠিক মতো হরফ-পরিচয় না-হওয়া এই যে শিশুরা, তারা আসলে শিক্ষাছুট তথা ড্রপ-আউট৤ আমরা তাদের জোর করে ধরে রেখেছি৤ধরে রাখায় দোষ নেই, দোষ হল তাদের হরফ-পরিচয় না-হওয়া৤ কে তার দায় নেবে? কেউ না৤ না তার দায় শিক্ষা বিভাগের, না শিক্ষকের, না শিক্ষাবিদদের৤ আসলে তার দায়টা যে কোথায় তা তলিয়ে দেখার ফুরসত কারও নেই৤ কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে কাজ চালিয়ে  নেওয়া হয়৤
       যুক্তবর্ণ বা যুক্তব্যঞ্জনের হরফগুলি পাশাপাশি স্পষ্ট হয়ে বসলে দোষটা কী? দোষ কিছু নেই, কিন্তু তবু তা করা হয় না৤ সাহসের অভাব৤ লোকে সেটা নেবে না, মানবে না, এটাই ভয়৤ কিন্তু লাইনোটাইপে তো সেদিকে অনেকটাই এগোনো গিয়েছিল, তাতে মানুষের সুবিধে হচ্ছিল৤ সহজে বোঝা যাচ্ছিল৤ আমরা বুঝতে দিতে চাই না, নাকি সহজে বুঝতে চাই না৤ লাইনোটাইপে বাংলা হরফ ছাপাব্যবস্থার যে বিপুল অগ্রগতি হয়েছিল, তা এক মুহূর্তে ছুঁড়ে ফেলে আবার পিছনপানে বিদ্যাসাগরী সাঁটে ফিরে যাওয়া হল কম্পিউটার কম্পোজিং-এ এসে৤ অগ্রগত আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভর করে পিছিয়ে যাওয়া হল! এটা অগ্রগতি তো নয়ই, দুরন্ত অধঃপতন৤ কিন্তু হরফ দেখতে সুন্দর হয়েছে, সেটাই হয়তো একমাত্র সাফাই৤ হরফ দেখতে সুন্দর হলেও ভাষার যে বিপুল পশ্চাৎ অপসরণ ঘটেছে তার কী হবে?
       পিছিয়ে যাবার এই উদ্যোগ কেন? সেটা নিতান্ত ব্যবসায়িক৤ ভাষার তাতে কী হল, না হল তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই? মোদ্দা কথা এ নিয়ে মাথা ঘামানো হয়নি৤ লাইনো টাইপের যিনি প্রকৃত উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা, যাঁর নাম কেউ জানে না, যিনি বিস্মৃতির আড়ালেই রয়ে গেলেন, সেই অজরচন্দ্র সরকার ছাপাখানার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তিনি তাঁর নিজস্ব গভীর গবেষণায় এই রীতির উদ্ভাবন করেছেন, তাঁর আজীবন-সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেল (বর্ণপরিচয়, পৃঃ-২৩১-২৩৬, নভেঃ-ডিসে ২০০৯)৤
       বাংলাদেশের লিপি বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেছেন, “মিতলেখনের দিক থেকে যুক্তবর্ণগুলি একটু বেশি রকম দরকারি বলেই মনে হতে পারে। কারণ, বাংলালিপির ধারণ ক্ষমতা এ যুক্তবর্ণগুলির বদৌলতে অনেকখানি বেড়ে যায়। ... সংশ্লিষ্ট হরফগুলির ধারক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অধিকাংশ যুক্তবর্ণই বস্তুত আমাদের কাছে অস্পষ্ট হলেও আমরা অবলীলাক্রমে সেগুলির ব্যবহার করি। সাধারণত আমাদের মনে এ নিয়ে কোন বিতর্ক জাগে না, কিংবা জাগলেও আমরা তা নিবৃত্ত করে রাখি। ... পরবর্তী কালে সেগুলিই যে দ্রুতলিখন প্রবণতায় অস্পষ্ট হয়ে গেছে; তা বলা যায়।” (বাংলা পাণ্ডুলিপি পাঠসমীক্ষা, পৃঃ-১৯৮-৯৯)৤
       সুতরাং যত দলা পাকানো হবে ব্যবসাটা ততোই বাড়বে৤ বাংলাভাষার স্বার্থে এই হঠকারী ব্যবসা বন্ধ হওয়া দরকার৤ ফাইভ/সিক্সে পড়া শিশুদের কেউ কেউ যে হরফ পরিচয়হীন তার সূত্র এখানে আছে৤
       বাংলায় আছে ৩৯৫টি যুক্তবর্ণ৤ এর সবগুলিই অবশ্য দলা পাকানো নয়৤ বিশুদ্ধ দলাপাকানো মণ্ডহরফ হল ৭৫টি৤ এগুলি প্রায় নতুন বর্ণের মতো করেই শিখতে হয়৤ ফলে বাংলায় হরফ পরিচয়ের জন্য হাজির মোট, ১১ স্বরবর্ণ, ৩৯ ব্যঞ্জনবর্ণ, আর দলা পাকানো নব্য চেহারার প্রায়-হরফ ৭৫, এইমিলে মোট ১২৫টি৤ এবার ১২৫টি বর্ণ শিখলে, তবেই হবে প্রকৃত বর্ণ পরিচয়৤
       আমরা শিক্ষা বিস্তারে খুবই উদ্যোগী৤ ফলে প্রথম প্রজন্মের বহু শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে৤ তাদের বাড়িতে কারও হরফ পরিচয় নেই, ফলে শিশুটির যা কিছু শিক্ষা সবই স্কুলে৤ সেখানে জনপ্রতি এক মিনিট সময়ও বরাদ্দ নেই৤ ক্লাসে ৭০জন শিক্ষার্থী৤ মূল বর্ণ পরিচয়ই হতে চায় না, তার উপরে বোঝার উপরে শাকের আঁটির মতো ৭৫ মণ্ডলিপি৤ কী করে সবার হরফ পরিচয় সুন্দর করে হবে? তাই ক্লাস পার হওয়া হয়, হরফের বেড়া টপকানো হয় না৤ কোথায় যে গলদ তা নিয়ে কে ভাববে? আর যার হরফপরিচয় হয়নি তার জন্য আর কী ভাবনা থাকতে পারে? একালে পিঠে বেত তো আর দেওয়া যাবে না, তাই থাক পড়ে, একদিন নিজের গরজে নিজেই খসে পড়বে!  এভাবেই চলছে৤ তবে স্কুলে আসছে কেন? টিফিনে খাবারটা পাওয়া যায়, আর স্কুল থেকে তাড়ায় না, তাই উপরের ক্লাসে ওঠা৤
       যুক্তবর্ণ সহজ করে লেখার সুত্র দুটি, এবং তা জলের মতো সহজ৤ বাংলায় সর্বাধিক চারটি বর্ণ নিয়ে যুক্তবর্ণ বা যুক্তব্যঞ্জন হতে পারে, এর বেশি বর্ণের সংযোগ বাংলায় হয় না৤ চার বর্ণের সংযোগ আসলে তিন বর্ণের সংযোগেরই হেরফের৤ তাই দুটি মাত্র সূত্র৤ দুই বর্ণ, আর তিন বর্ণ৤
       (১)প্রথম সূত্র -- দুই বর্ণের ক্ষেত্রে প্রথম বর্ণ হবে আয়তনে ছোটো কিন্তু অক্ষত, অবিকৃত, অখণ্ডিত, আর দ্বিতীয় বা শেষ বর্ণ সাধারণ এবং স্বাভাবিক, তার আয়তনে তাই কোনও পরিবর্তন নেই৤ যেমন-- শক্ত, ক্লাস, খদ্দর৤
       (২)দ্বিতীয় সূত্র -- তিনবর্ণের সংযোগের ক্ষেত্রে, যুক্তবর্ণের প্রথম দুটি  বর্ণ আয়তনে ছোটো, আর তৃতীয় বা শেষ বর্ণ সাধারণ এবং স্বাভাবিক, তার আয়তনে কোনও পরিবর্তন নেই৤
      সূত্র দুটি অঙ্কের মতো করে প্রকাশ করলে তা দেখাবে-- 
(১)C1C2  (২)C1C1C2
C মানে হল Consonant ব্যঞ্জনবর্ণ৤

দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট(2nd Generation font)
যুক্তবর্ণ :
যুক্তবর্ণ --(১) C1C2=ক্‍র -- বক্‍র(বক্র), ল্প -- গল্প
         (২)C1C1C2 = ম্প্‍র -- কম্প্‍র(কম্প্র), ন্ত্‍র -- আমন্ত্‍রন(আমন্ত্রণ)
এখানে,  C = ব্যঞ্জনবর্ণ( Consonant),  C2= পরে ব্যবহৃত ব্যঞ্জনটি, C1= প্রথমে ব্যবহৃত  ব্যঞ্জনবর্ণটি/ব্যঞ্জনবর্ণদুটি৤
C1 এবং  C2 বর্ণের আয়তনগত সম্পর্ক মোটামুটি C1= 2/3C2 হবে৤

       যুক্তবর্ণের প্রথম বর্ণ আকৃতিতে তথা কেবলমাত্র আয়তনে ছোটো হবে, কিন্তু অক্ষত, ও পূর্ণাঙ্গ, আর দ্বিতীয় বর্ণ সাধারণ বর্ণ৤ উভয় বর্ণই তথা বর্ণগুলি অক্ষত ও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পাশাপাশি বসবে অক্ষত বর্ণ হিসেবেই৤ যুক্তবর্ণ গঠনের এই পদ্ধতি হবে বর্ণসমবায় পদ্ধতি৤ অর্থাৎ৑ উচ্চারণের সময়েও যেমন সাধারণত প্রথম বর্ণের হ্রস্ব উচ্চারণ, এবং দ্বিতীয় বর্ণের দীর্ঘ উচ্চারণ(তথা স্বরান্ত উচ্চারণ) হয়, তেমনি লেখার ক্ষেত্রেও, সেই একই নীতি এর ফলে অনুসৃত হবে৤
       ক+ত=ক্ত -- শক্ত
       ন+ধ=ন্ধ -- গন্ধ
       স+থ=স্থ -- সুস্থ
       স+ত+র=স্ত্‍র -- স্ত্‍রৗইন= স্ত্রৈণ৤ 
                                         =স্ত্‍র -- অস্ত্‍র, বস্ত্‍র, শাস্ত্‍র

       এই যে যুক্তবর্ণে পরস্পর যোজিত বর্ণগুলি স্পষ্ট, অক্ষত, অবিকৃত অবস্থায় পাশাপাশি বসছে, এই রীতির জন্যই এটি দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট৤ কোনও বাংলা ফন্ট এখন অবধি এই রীতিতে তৈরি হয়নি৤ তবে বর্তমানে চালু ব্যবস্থার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে একটি মধ্যপন্থা নেওয়া হয়েছে যাতে, দুকূলই রক্ষা পায়৤ স্বচ্ছ যুক্তবর্ণও হবে, আবার তা চলতি ব্যবস্থার হাত ধরেও চলবে৤ এর ফলে নতুন স্বচ্ছ যুক্তবর্ণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে কোনও বাধা হবে না৤ পর্যায়ক্রমে তা আরও বেশি বেশি করে স্বচ্ছতায় নিয়ে যাওয়া হবে, তবে তা এখুনি নয়৤ তাতে জনমানসে প্রতিরোধ তৈরি হবে৤ এখন মধ্যপন্থা চলবে৤

       মধ্যপন্থী সমাধানের নতুন হরফ যোজন-ব্যবস্থা কেমন হবে তা দেখা যাক --
স্বরবর্ণ এবং স্বরবর্ণ চিহ্ন/কার চিহ্ন --
বর্ণ

চিহ্ন


ি
প্রয়োগ

কা
কি
কী
কু/রু
কূ/রূ
কৃ
কে
কৈ
কো
কৌ

ব্যঞ্জনবর্ণ চিহ্ন তথা ফলা--
বর্ণ

   র / রেফ
চিহ্ন




 ‍্য
 ‍্র  ‌/    র্‍়


প্রয়োগ

বিষণ্ণ
অন্ন
আত্ম
বাক্য
বক্র  /  তর্ক
ক্লাব
ক্বাথ

বক্‍র(বক্র), ল্প=গল্প৤ ম্প্‍র=কম্প্‍র(কম্প্র), ন্ত্‍র=আমন্ত্‍রন(আমন্ত্রণ)
স্ত্‍রৗইন =স্ত্রোইণ=স্ত্রৈণ৤ স্ত্‍র(স্ত্র)=অস্ত্‍র(অস্ত্র), বস্ত্‍র(বস্ত্র), শাস্ত্‍র(শাস্ত্র)
এই ফন্ট ব্যবহার করে নানা উপায়ে লেখা যায়, এর লিখনপরিসর অনেকটাই বড় করা হয়েছে৤ ভবিষ্যতে যদি কোনও বিদেশি শব্দের ধ্বনি সঠিকভাবে ধরতে হয় তবে এখানে সে পরিসরও আছে৤ কারণ ‘ক্খ্গ্ঘ্ঙ্চ’ এমনিভাবে পাঁচটি অবধি বর্ণের সংযোগ বা যুক্তধ্বনি বোঝানো যাবে৤ ৎসরু, ভ্লাদিমি, স্প্লিন্টার সহজেই লেখা যাব৤ দেখা যায় ‘স্প্লিন্টার’ লিখতে ‘স্‌প্লিন্টার’ লেখা হয়৤ চলতি ফন্টে ‘স্প্লি’ লেখা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই ভেঙে লেখা হয় ‘স্‌প্লি’৤
       শুধু এই দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট তথা হরফ যোজন-ব্যবস্থা অর্থাৎ লেখালিখিতে থেমে থাকা নয়, ক্রমে তা হবে তৃতীয় প্রজন্ম, এবং সর্বশেষে চতুর্থ প্রজন্ম৤ চতুর্থ প্রজন্মের বাংলা লেখা হবে ইংরেজি হরফের মতো হরফ কেবল পাশাপাশি বসিয়ে৤ তখন সব লেখালিখিই হবে নিশ্চিন্তে এবং নির্বিঘ্নে৤ 
       তৃতীয় প্রজন্মের ফন্ট এবং চতুর্থ প্রজন্মের ফন্টও তৈরি করা হয়েছে, তবে তা এখুনি ব্যবহারের কোনও ব্যাপার নেই, আগে দ্বিতীয় প্রজন্মের এই নতুন ফন্ট দিয়ে সহজ লেখালিখি শুরু হোক, তাতেই দীর্ঘ়কাল কেটে যাবে৤ তারপরে যখন তা সম্পূর্ণ আত্মস্থ হবে তখন ক্রমে তৃতীয় প্রজন্মের ফন্ট, এবং অবশেষে চতুর্থ প্রজন্মের ফন্ট ব্যবহার করা হবে৤
সামান্য একটু উদাহরণ দেখা যাক--
       তৃতীয় প্রজন্মের ফন্ট-- (3rd Generation font)



       কিছু নতুন গঠনের হরফও নির্মাণ করা হয়েছে যাতে বাংলা লেখায় বৈচিত্র্য আনা যায়৤ ইংরেজিতে এমনি ধরনের অনেক ফন্ট আছে, বাংলায় একেবারেই নেই, দীর্ঘ শ্রমে কয়েকটি তৈরি করা হয়েছে৤ এতে কেবল দুচারটি হরফের উদাহরণ নয়, পুরো বর্ণমালাই রূপায়ণ করা হয়েছে, তাই তা দিয়ে যুক্তবর্ণ লিখতেও কোনও অসুবিধে নেই৤ 

 
       চতুর্থ প্রজন্মের ফন্ট-- (4th Generation font)
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে

আমআদএর দএশএ হবএ শএই ছএলএ কবএ,
কথআয় নআ বড় হয়এ কাজএ বড় হবএ” 


       সেদিন বাংলা লেখার সত্যিকারের মুক্তি ঘটবে৤ তবে সেদিন আসতে অনেক অনেক দেরি আছে৤
       বাংলাদেশে সরকারিভাবে দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৤ তবে তা গড়ে ওঠার স্তরে আছে বলে তাতে বেশ কিছু ব্যতিক্রমও দেখা যায়৤ তবে আশা করা যায়, অচিরে তা সম্পূর্ণ দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট হয়ে উঠবে৤
       দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্টের সুবিধা বা অসুবিধা কী? 
       সুবিধা এই যে, তা অল্প বাংলাজানা মানুষও সহজে পড়তে, বুঝতে, লিখতে পারবেন৤ যেসব শিক্ষার্থী ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছে বলে বাংলায় সড়গড় নয়, তাদের পক্ষে এই ফন্ট দারুণ উপযোগী হবে৤
ইংরেজি-মাধ্যমে পড়া উচ্চশিক্ষিত পরিবারের বাঙালি শিশু হাঁপিয়ে গিয়ে বলবে না, “ওঃ বাংলাটা কী কঠিন!”
       আর বিদেশি যাঁরা বাংলাভাষা শিখতে চান, তাঁদের পক্ষেও এই রীতি খুবই উপযোগী হবে৤ বাংলা শিক্ষার প্রসার প্রচার উন্নয়ন ঘটবে৤ বাংলা নিয়ে যত আলোচনা হবে ততোই বাংলাভাষার বিকাশ ঘটবে৤
       এই ফন্টের অসুবিধা কী? 
       অসুবিধা হল, পুরানো ব্যবস্থায় অভ্যস্তরা পড়তে গিয়ে হোঁচট খাবেন৤ পড়ার ব্যাপারটা একটা অভ্যাস মাত্র৤ যেভাবে আমরা পড়তে অভ্যস্ত তার পরিবর্তন দেখলে প্রাথমিকভাবে অসুবিধা হতে পারে৤ তবে সেটা কঠিন নয়৤ কঠিনটা হল, “একবার যেটা অভ্যাস হইয়া যায় সেটাতে আর নাড়া দিতে ইচ্ছা হয় না৤ কেননা স্বভাবের চেয়ে অভ্যাসের জোর বেশি৤...অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে একটা অহংকারের যোগ আছে৤ যেটা বরাবর করিয়া আসিয়াছি সেটার যে অন্যথা হইতে পারে এমন কথা শুনিলে রাগ হয়৤ মতের অনৈক্যে রাগারাগি হইবার প্রধান কারণই এই অহংকার৤” (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা শব্দতত্ত্ব, পৃঃ-১, ২)৤
       যতই দিন যাবে বাংলাশিক্ষার বিস্তার ততোই ঘটবে, ফলে যদি না দ্রুত দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট ব্যবহার শুরু হয়, ততো বেশি লোককে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে, যা ক্রমবর্ধমান সংখ্যার দৌলতে ক্রমেই কঠিনতর হয়ে উঠবে৤ তাই আর দেরি না করে দ্বিতীয় প্রজন্মের ফন্ট ব্যবহার শুরু করা দরকার৤ লেখালিখি হল একটি অলিখিত সামাজিক চুক্তি৤ তাই যে যার ইচ্ছে মতো লেখা চলে না, যৌথ সম্মতি দরকার৤
       যুক্তবর্ণ বেশি করে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখলেই যে তা সঠিক হবে, এমন নয়, বরং পেঁচিয়ে দলা পাকিয়ে লিখলে শিক্ষার প্রসার কম হবে, শিক্ষা থেকে মানুষ দূরে থাকবে৤ 
প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীর কাছে দলা পাকানো মণ্ডহরফগুলি নতুন নতুন বর্ণ বলে মনে হবে৤ সেগুলি যে মূল বর্ণমালাভুক্ত নয়, তা তাদের বোধে আসবে না৤ তাই তাদের কাছে বাংলা বর্ণের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে অন্তত ৭৫টির মতো৤ তাদের কাছে বাংলা বর্ণ দাঁড়াবে --স্বরবর্ণ ১১, ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯, মোট ৫০টি, তার সঙ্গে আরও ৭৫টি মিলে মোট হবে ১২৫টি!  সেটা রপ্ত করা প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীর পক্ষে অতীব কঠিন হবে৤ সুতরাং সেটা আমাদের উদ্দেশ্য হতে পারে না৤
       বাংলাদেশ সরকার যখন উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে আমাদেরও এ নিয়ে সক্রিয় হওয়া দরকার৤ এমনিতে আমরা বাংলা ইউনিকোড ফন্ট ব্যবহারে বাংলাদেশ থেকে অনেক পিছিয়ে আছি, তাই আর পিছিয়ে পড়া নয়, জোর কদমে লেগে পড়তে হবে বাংলা ভাষার লিখন ব্যবস্থা নিয়ে৤ আর সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এই যুক্তবর্ণের দৌলতে বাংলাশিক্ষার গতি অনেক বাড়বে৤ সেটাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য৤ সহজ হয়ে দিকে-দিকে বাংলা ছড়িয়ে পড়ুক৤ সেটাই আমাদের পরম সুখ৤











--  ০০  --


সর্বান্তিক পরিমার্জন ১০/০৬/২০১৬ 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন